মোট দেখেছে : 1,292
প্রসারিত করো ছোট করা পরবর্তীতে পড়ুন ছাপা

‘ক্রিয়েটিভ ডকুমেন্টারি খুবই চ্যালেঞ্জিং’

প্রযোজনা, নির্মাণ, পরিবেশনা ও প্রদর্শনী— চলচ্চিত্রের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত প্রধান এ বিষয়গুলো। এ ধাপগুলোর সঙ্গে যুক্তরা, বিশেষ করে তরুণদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম ফিল্ম বাজার। ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ার নিয়মিত এ আয়োজনে সারা বিশ্ব থেকে প্রযোজক, পরিবেশক ও নির্মাতারা তাদের পরিকল্পনা, প্রকল্প নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ থেকে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, আবু শাহেদ ইমনের মতো নির্মাতারা নিজেদের প্রজেক্ট নিয়ে এর আগে এখানে অংশগ্রহণ করেছেন। ফিল্ম বাজারের ভিউয়িং রুমে নিজেদের ছবি নিয়ে পিচ করার সুযোগ পেতে সারা বিশ্ব থেকে মোট ২০৩টি প্রকল্প জমা পড়েছিল এ বছর। এর মধ্য থেকে ফিল্ম বাজারের সুপারিশ পেয়ে পিচিংয়ের জন্য মনোনয়ন পেয়েছে ২৪টি ছবি। যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ থেকে নির্মাতা হুমায়রা বিলকিসের প্রামাণ্যচিত্র ‘বাগানিয়া’ (গার্ডেন অব মেমোরিজ) এবং আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’। পাঁচদিনব্যাপী উত্সবটি শুরু হবে আগামী ২০ নভেম্বর। এতে অংশ নিতে আজ ঢাকা ছাড়ছেন হুমায়রা বিলকিস। টকিজের মুখোমুখি হয়ে বাগানিয়া ও ফিল্ম বাজারে অংশগ্রহণের অনুভূতি ব্যক্ত করলেন তিনি—

২০৩টি প্রকল্পের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আপনার নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র বাগানিয়া  আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের লাইভ ফ্রম ঢাকা ভারতে অনুষ্ঠেয়ফিল্ম বাজারে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে

ফিল্ম বাজারের বিশেষ সুপারিশে ভিউয়িং রুমে নিজেদের ছবি নিয়ে পিচ করার সুযোগ পাওয়াটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

আপনার নির্মিত ‘বাগানিয়া’ বা ‘গার্ডেন অব মেমোরিজ’ নির্মাণের শুরুর গল্পটা শুনতে চাই

২০১৫ সালে পাঁচ নতুন নির্মাতাকে ফিচার ফিল্ম নির্মাণের জন্য বেঙ্গল ক্রিয়েশনস অর্থসহায়তা দেয়। এখানেই আমার এ প্রজেক্টটি ফান্ড পায়। ২০১৫ সালে কাজ শুরু করলেও এ ছবি নির্মাণের সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা ২০০৭ সাল থেকে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল শ্রীমঙ্গল থেকে ঘণ্টাতিনেকের রাস্তা পেরিয়ে সীমান্তলাগোয়া একটা গ্রামে ঘুরতে গিয়েছিলাম তখন। এ সময়টাতে ওখানকার চা বাগানিয়াদের সঙ্গে আমার সখ্য গড়ে উঠতে থাকে। যখন ওনাদের সঙ্গে সম্পর্কটা ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠল, তার একটা পর্যায়ে গিয়ে আমার মনে হলো এ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র বানাই। আসলে ডকুমেন্টারির মূল বিষয়টা হলো সম্পর্ক। মানবীয় সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে প্রামাণ্যচিত্র হয়। যে কারণে তাদের সঙ্গে এ সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারটা এত সহজ ছিল না। কারণ আমাদের দুপক্ষের মধ্যে পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপনের একটা ব্যাপার ছিল। অনেকটা সময় নিয়ে এ সম্পর্ক অর্জনের পরই মূলত কাজ শুরু করি।

শুরুতে তো আপনার  প্রকল্পটির নাম ছিল ‘মাই লং রোড টু স্কুল পরে সে নাম বদলে বাগানিয়া রাখলেন কেন?

হ্যাঁ, বেঙ্গল ক্রিয়েশনস বরাবর মাই লং রোড টু স্কুল নামেই ফান্ডের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু পরে  দেখা যায়, ওখানকার বাস্তবতা একেবারেই বদলে গেছে। আমার পরিকল্পনায় যে চরিত্রের জন্য যে মানুষগুলো বাছাই করেছিলাম, তাদের অনেকেই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। এরপর গল্পের অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে। তাছাড়া পুরো চা জনগোষ্ঠী নিজেদেরকে সবাই বাগানিয়া বলে ডাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কুলি শব্দটাকে তারা খুব নেতিবাচকভাবে দেখেন। এটাও টাইটেল পরিবর্তনের বড় কারণ।

ওই গল্পে আপনি আসলে কোন দিকটাকে ফোকাসে রাখতে চেয়েছিলেন?

৭১ মিনিট দৈর্ঘ্যের এ গল্পটা আসলে জীবন-সংগ্রামের গল্প। আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে যা দাঁড়ায়: চা শ্রমিকরা তো মাইগ্রেটেড জনগোষ্ঠী। দেড়শ বছরেরও বেশি আগে তাদেরকে জোর করে ধরে নিয়ে আনা হয়েছিল এ দেশে। এখন এ জনগোষ্ঠীর সদস্যরা এতটাই মানসিকভাবে বন্দি হয়ে গেছে যে, চাইলেই বন্দিত্বের শিকল থেকে মুক্ত হতে পারেন না তারা।

ক্রিয়েটিভ ডকুমেন্টারি হিসেবে বাগানিয়াকে আখ্যায়িত করছেন কেন?

সত্যি বলতে কি, বাংলাদেশে এ ধারণাটা এখনো অপরিচিত। আমার পড়াশোনাই ক্রিয়েটিভ ডকুমেন্টারির ওপর। ভারতে এ নিয়ে পড়াশোনা করেছি। আমাদের এখানে ডকুমেন্টারি বলতে বোঝানো হয়, তথ্য শুধুই তথ্য। এটার মধ্যে সিনেমাটিক কোনো অ্যাপ্রোচ দেখি না। এতে জীবনের অনেকগুলো বিষয় বাদ পড়ে যায়। এক্ষেত্রে ক্রিয়েটিভ ডকুমেন্টারি খুবই চ্যালেঞ্জিং। যা যা বাদ পড়ে, চোখের আড়ালে চলে যায়, এ বিষয়গুলোকেই ক্রিয়েটিভ ডকুমেন্টারি তুলে আনতে পারে। সিনেমাটিক ভাষাটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

ফিল্ম বাজারে অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা

কেন বোধ করলেন?

ফিল্ম বাজার এশিয়ার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য অনেক বড় একটা প্লাটফর্ম। এখানে একেকজন একেক উদ্দেশ্যে যায়। কেউ যায় কো-প্রডাকশনের জন্য, কেউবা ফান্ডিংয়ের জন্য। ফিল্ম বাজারের ভিউয়িং রুমে বিক্রয়, বিপণন ও উত্সব বিভাগে সংশ্লিষ্টদের সামনে আমার ছবিটি তুলে ধরব। যারা বিশ্বব্যাপী ছবিটি ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ছবি ডিস্ট্রিবিউশনের মান আশাব্যঞ্জক নয়। ভিন্ন গল্পের ছবির জন্য তো তা আরো কঠিন। যেহেতু আমার ছবির সব কাজ শেষ, সেহেতু আমি শুধু এর ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে নিজের চিন্তাভাবনা তুলে ধরব এখানে।

বাংলাদেশে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে নারী নির্মাতারা বেশ আগ্রহী হচ্ছেন

প্রামাণ্যচিত্রের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, অনেকগুলো সম্পর্ক নিয়ে কাজ করতে হয় নির্মাতাকে। মোটকথা প্রত্যেকটি পর্বে সংবেদনশীলতা গুরুত্বপূর্ণ। একটা সম্পর্কের যত কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব হবে, ততই প্রামাণ্যচিত্রটি সার্থক হয়ে উঠবে। আমাদের দেশের নারীরা যে সংগ্রামের ভেতর থেকে যায়, তারা আসলে অনেকগুলো সম্পর্ককে এভাবে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। সেদিক থেকে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেশি ইতিবাচক।

আপনার পরের পরিকল্পনা

সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘ঢাকা ডকল্যাব’-এ আমার প্রকল্প ‘বিলকিস অ্যান্ড বিলকিস’ পিচ করেছি। এটি নিয়ে সামনে এগোনোর চিন্তাভাবনা করছি।