মোট দেখেছে : 798
প্রসারিত করো ছোট করা পরবর্তীতে পড়ুন ছাপা

রূপসীর ডিস মকবুল ওরুফে ফেনসি মুকবুলের খতিয়ান

রূপসীর ডিস মকবুল ওরুফে ফেনসি মুকবুলের খতিয়ান

চার ভাইয়ের মধ্যে মকবুল ৩য় । বড় ভাই আমজাদের হাত ধরে ডিস ব্যবসার বিল কালেকশন ম্যান হিসেবে এ ব্যবসায় আগমন ঘটে তার । এর পর আমজাদ ক্যাবলের নেটওয়ার্কের ম্যানেজারকে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিয়ে এলাকা ছাড়া করার পর নিজেই ম্যানেজার হয় বড় ভাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের । ভালই কাটছিল তখন তার দিনকাল । ধীরে ধীরে নিজের কবজায় নিতে থাকে ডিস ব্যবসার সকল কার্যক্রম । হঠাৎ বড় ভাই আমজাদ জানতে পারে ট্রেড লাইসেন্স, টিন লাইসেন্স, বিটিভি লাইসেন্স, সহ যাবতীয় কাগজপত্রে মালিক মকবুল হোসাইন । এই নিয়ে দন্দে জড়িয়ে পরে তার বড় ভাই আমজাদ সহ আরো আপন দুই সহদরের সাথে । একপর্যায় তার আপন ভাইয়েরা তাকে ব্যাপক মারধর ও কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে । সে গুন্ডা বাহিনীর সাহায্যে ভাইয়ের বাসা থেকে কন্ট্রোলরুমের মালামাল লুটপাট করে রূপসীর শওকত মার্কেটের ৩য় তলায় নতুন কন্ট্রোলরুম করে ডিজিটাল ওয়ান নামে ।

অন্য দিকে তার আপন সহোদরদের নামে মাদক ও চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে ব্যবসা প্রসার করতে থাকে । এরপর থেকে শুরু হয় তার নতুন ইন্টারনেট ব্যবসা । বাংলাদেশ সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী কোন ডিস ব্যবসায়ীর ইন্টারনেট ব্যবসা করতে পারবে না । অথচ প্রশাসনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে গত ৭ বছর যাবত সে একসাথে দুইটা ব্যবসা পরিচালনা করছে । তার বিরুদ্ধে অভিযোগেরও কমতি নেই । বাংলাদেশের কোথাও ১ এমবি ইন্টারনেট দিয়ে ১০০০ টাকা বিল হয়না, কিন্তু তার মালিকানাধীন ডিজিটাল ওয়ান ইন্টারনেট সার্ভিস শত শত গ্রাহকে জিম্মি করে এ বিল নিচ্ছে । তার রয়েছে সুবিশাল গুন্ডা-পান্ডা, ফেনসিডিল ও ইয়াবা বাহিনী ।

কেউ যদি রূপসীর উপর দিয়ে কোথাও অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সার্ভিসের ক্যাবল টানায়, তাহলে মুকবুলের গুন্ডা-পান্ডা, ফেনসিডিল ও ইয়াবা বাহিনীর মাধ্যমে রাতের অন্ধকারে সেই ক্যাবল খুলে তার অফিসে নিয়ে আসা হয় । এভাবে কয়েকবার করার পর নতুন কম্পানী আর রূপসীতে টিকতে না পেরে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলে । যার ফলে রূপসীবাসীকে জিম্মি করে, একক অবৈধ ইন্টারনেট সম্রাজ্যবনে যায় ফেনসি মকবুল । শুধু রুপসী ই নয় মুকবুলের ক্যাবল চুরির ভয়ংকর থাবার আছর পড়েছে পুরো রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারে । গত ৭ মার্চ ২০২০ ইং এ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কান্দাইল বাস স্ট্যান্ড এলাকায় সন্ধ্যা ৭ টার দিকে মকবুলের গৃহপালিত কাটার মাস্টার আব্দুর রাজ্জাক ওরুফে বাবা রাজ্জাককে তার কাটার সরঞ্জাম যথাঃ কাটিং প্লায়ার্স, রড, পল্লীবিদ্যুতের পাইপের সাথে কাচি ফিটিং সহ তাকে হাতেনাতে ধরে উত্তম মাধ্যম দেয় স্থানীয় লোকজন অতঃপর তাকে আড়াইহাজার থানায় সাপোর্দ করা হয় ।

খোজ নিয়ে জানা যায়, অতিরিক্ত পরিমানে ইয়াবা সেবনের কারনে তাকে রূপসীর সাধরন জনগন বাবা রাজ্জাক নামেই চিনত । আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে, তিনি জানান ডিজিটাল ওয়ানের কর্মচারী আব্দুর রাজ্জাককে তার কাটা অবস্থায় স্থানীয় লোকজন ধরে ফেলে এবং তাকে উত্তম মাধ্যম দিয়ে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে । তারপর সে পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায় ।


এরপর মকবুল আরো হিংস্র হয়ে ওঠে । গত ১১ মার্চ রাতে পুর্বাচল ক্যাবল নেটওয়ার্কের কর্মচারী আরিফ হোসেনকে, ভাতিজা শামিমের সাথে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে বেলদি এলাকায় পৌছালে, মকবুল তার রিকসার গতি রোধ করে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে হত্যার উদ্দেশে অপহরণ করে তার ডিজিটাল ওয়ান অফিসের টর্চার সেলে ঢুকিয়ে হাতুড়ী দিয়ে নির্মমভাবে টর্চার করতে থাকে ।

এ অবস্থায় তাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে দিয়ে নানান কথা বলিয়ে তা রেকর্ড করে রাখে । এদিকে শামিম পুর্বাচল ক্যাবল নেটওয়ার্কের মালিক হুমায়ন কবির মিয়াকে জানালে তিনি দ্রুত রূপগঞ্জ থানায় যোগাযোগ করলে পুলিশের প্রযুক্তি টিমের সহযোগিতায় আরিফের অবস্থান রূপসীর ডিজিটাল ওয়ানের অফিসে সনাক্ত করা হয় । এরপর গভীর রাতে রূপসীর ডিজিটাল ওয়ান অফিস ঘেরাও করে পুলিশের বিশেষ টিমের অভিযানের মাধ্যমে আরিফকে হাত, পা ও বুকে মারাত্মক জখম, রক্তাক্ত এবং মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত “রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে” ভর্তি করা হয় ।

ডিজিটাল ওয়ান টর্চার সেল থেকে ফেনসিডিল পান করা অবস্থায় মকবুল ও তার ভাই ইলিয়াস, নবী হোসেন, জামান, সুমন, আব্দুল্লাহ আল মামুন কে গ্রেফতার করা হয় । সেখান থেকে অত্যন্ত সু-কৌশলে পালিয়ে যায় বেলদী এলাকার অবৈধ ডিস ব্যবসায়ী তারাজউদ্দিনের ছেলে মহসিন মিয়া । এরপর মকবুল সহ ৬ জনকে রূপগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হয় । এ ব্যপারে পুর্বাচল ক্যাবল নেটওয়ার্কের মালিক হুমায়ন কবির মিয়া বাদি হয়ে মকবুলকে প্রধান আসামি দিয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন । যার নম্বরঃ ৪১/২০০ তাং ১২/০৩/২০২০ইং ।

এর আগে মকবুল আরিফকে মোবাইল ফোনে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে হুমকি ধামকি দেয় । সে তাৎক্ষণিক থানায় গিয়ে তার জীবনের সুরক্ষা চেয়ে মকবুলের নামে একটি সাধারন ডায়রি করেন । যার নম্বরঃ ১৬৫ তাং ০৪/০৩/২০২০ ইং । অপহরণ মামলায় মকবুল সহ ৬ জনকে আদালত জেল হাজতে প্রেরন করেন । ৮ দিন জেলের ঘানি টেনে জামিনে বের হয় মকবুলের ৫ সহযোগী, কিন্তু মকবুল দীর্ঘ ১৩ দিন পর মুচলেখা দিয়ে তার পর জামিনে ছাড়া পায় । ছাড়া পেয়ে সে আরো উগ্রপন্থী হয়ে উঠে । সারা রূপগঞ্জ ও আশপাশের এলাকার সকল ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের কাছে এখন নতুন আতংকের নাম ফেনসি মোকবুল । সে এখন সারারাত তার অফিসে ফেনসিডিল, মদ ও ইয়াবার আসর জমিয়ে তার সঙ্গী সাথী নিয়ে মগ্ন থাকে ।

গভীর রাতে তার বাহিনী নিয়ে সিএনজি ও পিকাপ গাড়িতে তার চুরির যন্ত্র সামগ্রী নিয়ে রাস্তায় নেমে পরে । কখনো আড়াইহাজারের পুড়িন্দা থেকে অপটিক্যাল ফাইভার কেটে নিয়ে গাড়িতে করে অফিসে নিয়ে আসে, কখনো কাঞ্চন ব্রিজ থেকে ক্যাবল কেটে নিয়ে আসে, কখনো বেলদির তার ঘনিষ্ট সহচর অপহরণ মামলার পলাতক আসামী মহসিনকে নিয়ে পুর্বাচলের আসে পাশের একাকার অপটিক্যাল ফাইবার কেটে টুকরো টুকরে করে আসে । মোকবুলের কারনে অত্র একালার কেউ শান্তিতে ব্যবসা করতে পারছে ।


BTRC তে মকবুলের নামে বেশ কিছু লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে । শিগ্রই তার অবৈধ ইন্টারনেট লাইসেন্সের ব্যপারে তার চুরির ব্যপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে । আর রূপসী এলাকা থেকে ভোক্তা অধিকারে বেশ কিছু অভিযোগ পড়েছে, অতি দ্রুতই মকবুলের অবৈধ প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল ওয়ান ইন্টারনেটকে ভোক্তা অধিকার আইনে জরিমান করা হবে বলে আশ্বস্থ করা হয়েছে ।

মকবুলের টর্চার সেলের হাতুড়িপেটার সি সি ক্যামেরার ভিডিও ও তার ভাবীর সাথে পরকীয়ার কথোপকথন নিয়ে শিগ্রই ভিডিও প্রতিবেদন আসছে ।

 

আরো দেখুন

আরও সংবাদ