মোট দেখেছে : 1,196
প্রসারিত করো ছোট করা পরবর্তীতে পড়ুন ছাপা

গ্রহণের কাল, সংকটে পারিবারিক বন্ধন


পরকীয়া নিয়ে দুদিন ধরে ডাক্তার দম্পতিকে ঘিরে সরব সোস্যাল মিডিয়া, বিভিন্ন মিডিয়া, ব্যক্তিগত ফোঁস ফোঁসানি, পুরুষের মানববন্ধন, বিশিষ্টজনের লেখায় মরার ওপর খাড়ার ঘা, আরও কতো কি?



উপমহাদেশের পারিবারিক বন্ধন বিশ্বের অন্য দেশের তুলনা করলে এখনো শক্ত অটুট। পরকীয়াকে উপজীব্য করে প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিককালে রচিত রয়েছে বিশিষ্টজনের অসংখ্য গ্রন্থ ও লেখনী। আবার সে লেখনীতে কখনো স্থান পেয়েছে, উদ্দাম রগরগে যৌনতা, কখনো যৌন শিল্পের নান্দনিকতা।


তারা নারী চরিত্রকে করেছেন পাপ পঙ্কিল! পুরুষ চরিত্রকে সাজিয়েছেন কস্তুরি পান রসের উতলা হাওয়ায় রমনের সঞ্জীবন সুধার পসরায়। তারা নারীকে নিয়ে কামুক কামনায় রচনা করেছেন পটানো একের অধিক বিশেষন, পটাতে না পেরে ছলা কলায় করিয়েছেন ক্রন্দন!


সেই আদিমকাল হতে মানব-মানবী বন জঙ্গলের সময় পেরিয়ে তৃণভূমিতে পশুপালন, শষ্যফলানো, চাষাবাদ, পরিবার, গোত্রপ্রথায় বসবাস, দ্রাবিড় সভ্যতা, সিন্ধু সভ্যতা যতো সভ্যতার উত্তরন ঘটেছে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একেবারে আদি যুগ হতে যৌনতার সঙ্গে মিশে আছে বিভিন্ন সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রয়োজন। ধাপে ধাপে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে নারীদের অদম্য চরম ভোগের জন্যে বাৎসায়নের কামসূত্র শুরু।



এর পরে পুরুষদের আর পিছনে তাকাতে হয়নি। নারীরা পুরুষশাসিত সমাজে শিক্ষা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে পিছিয়ে পড়ায় পুরুষের হাতের ক্রীড়নক হয়ে তাদের মনোরঞ্জনের জন্যে হতে হয়েছে- কখনো নর্তকী, কখনো নৃত্যগীতে দেহ প্রসারিনী, কখনো সুরাপানের পাত্র হাতে কাটিয়েছেন অনিদ্রা রজনী, উপঢৌকন, হেরেমখানা, যুদ্ধক্ষেত্র, এমনকি শেষ মেষ পুরুষেরা পাঠিয়েছেন, গণিকালয়ে।


কি নির্মমতা!!কি জঘন্য? নারীরা প্রাচীন, মধ্যযুগ পেরিয়ে সভ্যতার আধুনিক যুগেও উপমহাদেশ ছাপিয়ে অন্য মহাদেশে তারা কতটুকু ভালো আছেন? সবিতো জানেন। আদিকালে তারা পুরুষের দাসত্বের শিকল পড়েছেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি না থাকায়, শিক্ষা,চিকিৎসা জটর জ্বালা, ধর্মীয় সামাজিক, গোত্রপ্রধানদের কারণে।


মধ্যযুগে এসে ও তারা শিকার হয়েছেন, প্রচণ্ড যৌননিগ্রহতায়, যুদ্ধ, ভয়াবহ দূর্ভিক্ষের ছোবলে, তারা পরিবার, সন্তান, স্বামী বাঁচানোর জন্যে চিরতরে শামিল হয়েছেন অগস্ত্যযাত্রায়। আধুনিক যুগে ও এসে তারা কি মুক্তি পাচ্ছেন?


যৌনতাকে পুঁজি করে পরকীয়া, বহুগামিতায় উপমহাদেশ কেনো, বিশ্বব্যাপী তাদের মুক্তি নেই। তারা বাধ্য হয়েছে এবং হচ্ছেন জটর জ্বালা, প্রভাব, যুদ্ধের হিংসা, প্রথা, প্রতারনা, লোভ, জৈবিক তাড়নার কারণে। আধুনিক যুগে এসেও পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর চেয়ে পুরুষেরা পরকীয়া, বহুগামিতায় এগিয়ে।


আধুনিক যুগের পরকীয়া, বহুগামিতার জন্যে পুরুষেরা তৈরি করেছেন একাধিক ফাঁদ। সমাজপতি, বিত্তবান, প্রভাবশালী, রাজনীতি, অভিনয়, সোস্যাল হাইটেক পার্সোনালিটি। ব্যস, নারীরা যাবে কোথায়? একটা ফাঁদে তো পড়বেই!!


ঘরে সঙ্গীর চতুরতার অভিনয় ফাঁদ, বাইরে চতুরঙ্গ ফাঁদ, সে আদিম যুগ হতে এ পর্যন্ত? দীর্ঘ কাল বিবর্তনের ধারায় প্রকটিত। ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীকে যুগে যুগে করা হয়েছে অসন্মানিত, বিভিন্ন নিজস্ব মনগড়া মত, রেওয়াজ, রুটিনের শিকারে তারা পরিনত হয়েছেন কামুক ধর্মান্ধদের চিত্তরঞ্জনের খোরাকে, এখনো হচ্ছেন। (ধর্মীয় বলে বিস্তারিত আলোচনা করা গেল না) এক সময়ে নারীদের ঠাঁই হয়েছে গনিকালয়। পরিবারের কাছে সমাজের কাছে আপনজনের কাছে হয়েছেন অস্পৃশ্য!


প্রাণীকুলের শিরোমণি মানব, মানবী যৌন শাসন, পরিবার, সমাজের শৃংখলা, স্ব -স্ব ধর্মের আনুগত্য হয়ে পুত:পবিত্রতায় বিবাহ করে সংসারজীবন শুরু করেন (লিভ টুগেদার, নাস্তিকদের ক্ষেত্রে আলাদা)। বিবাহের পরম উদ্দেশ্য হচ্ছে, পরস্পর শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, পুত:পবিত্রতায় সংসার জীবন পালন। বিবাহের আগে কিংবা পরে একগামিতা, বহুগামিতা, শর্ট টার্ম, লংটার্ম রিলেশন কোনো ধর্মেই স্বীকৃত নয়।


মানব মানবীর পরস্পরের দুর্ণিবার আকর্ষণ বায়োলজিক্যাল। জীববিজ্ঞানে জৈব বিবর্তন, জিন রহস্য, মনোবিজ্ঞান, মানব বিবর্তনে ডারউইনের মতবাদে নারী পুরুষের পরস্পর মনের অবগুণ্ঠনে লালিত করেন অদম্য কামনা বাসনা ও লোভ। এ দুর্নিবার কামনার অনলে পুড়ে ছাই হয়েছে, কতো রাজা, রানী, সম্রাট, মহাজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব। গর্দান গেছে অগুণিত জনের,কতো কূলবধূ হারিয়েছে দুকূল। বিশ্বব্যাপী জড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ বহুগামিতায়। সেলিব্রটি হতে শুরু করে কেউ বাদ যাচ্ছে না!


আমার জানামতে, নারীরা অনেক সংবেদনশীল,পরিবার কেন্দ্রিক, স্বামীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ও ভরসায় হাত রেখে চলেন। আমাদের নারীরা জীবনের বিনিময়ে হলেও স্বামী-সংসারে সন্তুষ্ট। আকাশ কুসুম চাহিদা করেন না, সারল্য ভরা জীবন। পরিবারের সবাই খাবার পর বাসী, পঁচা খাবার পর্যন্ত খেয়ে নেন।


দুজন চাকরি করলেও বাজার, রান্না, হতে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত সংসার সামলিয়ে আবার ভোরে উঠে যান। স্বামী যথেষ্ট ঘুমিয়ে নেন, তবুও তাদের অভিযোগ অনুযোগ নেই। একদিন যখন বুঝতে পারে, তার গুণধর গর্বের স্বামী নিজের স্ত্রীকে বাদ দিয়ে পরস্ত্রীকে বেশি ভালো লাগে? তখনি ঘটে বিপত্তি!


টানাটানিতে অবিশ্বাসে সুখের স্বর্গ হয়ে পড়ে নরক যন্ত্রনাময়। অপমান, বঞ্চনার মাথায় ঝাঁপি নিয়ে পেটের তাগিদে সন্তানের মুখপানে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে অনেক নারী সংসার করেন। যারা স্বাবলম্বী তারা ডিভোর্স কিংবা আলাদা থাকেন।


একটা সময় স্বাবলম্বী নারীরা শ্বশুরবাড়িতে কিংবা স্বামী সংসারে বিশেষ গুরুত্ব পেতেন। এখন কালের উল্ঠো হাওয়ায় পানসে!! আসলে আমরা এক ভয়াবহ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে চলেছি? কি শিক্ষিত? কি অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত, স্বাবলম্বী, বেকার, সবাই কেমন জানি দিনে দিনে বদলে যাচ্ছি।


পরস্পরের প্রতি অনুরাগের স্থায়ীত্বের পারদ নিম্নমুখী। ভার্চুয়াল, আকাশ সংস্কৃতিতে সবাই ব্যস্ত। ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, আকাশ সংস্কৃতিতে সবাই পারদর্শী। কে কাকে ছলনার জালে ফেলবে? সহজ সরল কূলবধূ হতে পৌঢ় বৃদ্ধা পর্যন্ত কারো নিস্তার নেই।


নারীরা এখনো সহজ সরল, আবেগপ্রবন, তারা মায়ের জাতি। সহজ সরল জীবন, মমতা লালন করেন। সে আদিম যুগের সারল্যতা, মমতাময় চাহনির মতো মমতাময়ীদের এখনো আমুল পরিবর্তনের ধারার ব্যত্যয় ঘটেনি। তাদের হিংস্র, অবিমুষ্যতার খড়গ হাতে নিতে বাধ্য করেছে, ধূর্ত, প্রতারক, মিথ্যুক, কাপুরুষ, হায়েনারা।


নারীরা যুগে যুগে শোষিত বঞ্চিত। তাদের হাজারো কষ্ট দিলে ও তারা ক্ষমা করে দেন। আপন করে নেন। তারা এখনো আমাদের চেয়ে অনেক সৎ। তারা আমাদের মেয়ে, স্ত্রী, বোন, জননী। আমরা বুকে হাত রেখে কি বলতে পারি- সবাই একগামিতায় বিশ্বাসী? বহুগামিতার ধারে পাশে ও নেই?


সৃষ্টির পারম্ভ অবধি কতো মহাজন, সাধকের সাধনা ভঙ্গ হয়েছে পরকীয়ার কোপানলে। আইন করে হার কমানো যেতে পারে, পুরোপুরি বন্ধ হবে না। এখন যৌন সহিংসতা বন্ধে আইন আছে। অপরাধের জন্য পর্যাপ্ত দণ্ড আছে। সবাই জানে। কিন্তু পুরোপুরিভাবে বন্ধ হচ্ছে?


আমি পূর্বে বলেছি, পরকীয়া/বহুগামিতা বন্ধে ধর্মীয় অনুশাসনের বিকল্প নেই। একটি বিশ্বাস প্রমিজ হতে বিবাহজীবন শুরু। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষন মানব, মানবীর সহজাত প্রবৃত্তি।


বিবাহ জীবনের শুরু হতে প্রমিজ, সততা ধরে রাখতে পারলেই এবং ধর্মীয় অনুশাসন পালনে কেবল পরকীয়া/বহুগামিতার মতো চারিত্রিক অধ:পতন হতে রোধ করা যেতে পারে।


আগে মিডিয়া ছিল না,তেমন একটা চাউর হতো না,এখন মিডিয়ার কল্যানে চাউর হচ্ছে সমগ্র দেশ,বিদেশে। বেঘোরে প্রাণ দিচ্ছে, স্বামী স্ত্রী! কি নির্মমতায়? এক সঙ্গে থাকা যে মানুষটির চেয়ে আপন কেউ নেই, সে মানুষটা নির্মমভাবে খুন হচ্ছেন তার প্রিয়জনের হাতে। কখনো তের টুকরো, কখনো চোখ তুলে, কখনো পিটিয়ে, আরও বিশ্রিভাবে।


এ খুন হতে রেহাই মিলছে না নিস্পাপ অবুঝ শিশুদের! তারা আরও ভয়ানক হিংসায় বেঘোরে মাতা পিতার হাতে প্রান দিচ্ছেন?


আমাদের পারিবারিক বন্ধন এখনো যথেষ্ট দৃঢ়, বিবাহবহির্ভূত যৌনতা (extra marital affair বা extra marital sex) সম্পর্কে ভারতের সুপ্রীম কোর্ট রায়ে বলেন, কোনো বিবাহিত নারী বা পুরুষ যদি অন্য কারো সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক করেন, তাহলে তা আর ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে না।


ভারতের বিশিষ্টজনেরা এ রায়কে মেনে নিতে পারেননি। কেউ বলেন, এ রায়ের পরিণতি ভয়ংকর হবে। নারী পুরুষ এ আস্কারা পেয়ে উশৃংখল হয়ে পড়বেন। অনেকে এ রায়কে শুধুমাত্র জৈবিক চরমভোগের চাহিদা বলেছেন। দেশের নারী নির্যাতন রোধে প্রায়োগিক আইনের দরকার নেই। পারিবারিক জীবনে, সমাজ জীবনে তৈরি হবে চরমসংকট! বহুগামী নারীদের সন্তানদের পিতৃত্বের প্রশ্নে তৈরি হবে অবিশ্বাস ও চরম বৈরীতা। ডিএনএ পরীক্ষা করাতে আদালতের মাধ্যমে সন্তানদের স্বীকৃতি দিতে হবে। এতে সবার মধ্যে পড়ে ধ্বংস হচ্ছে পারিবারিক বন্ধন,সন্তানের ভবিষ্যত।


কোনো বহুগামি মহিলাকে ডিভোর্স দিতে চাইলে স্বামীকে বিপুল পরিমানে গুনতে হবে অর্থ। পরকীয়াকে বৈধ করলে সম্পর্কের বাঁধন থাকে না। নিজের সংসার পছন্দের লাইফ পার্টনারের স্বপ্ন কে না দেখে? এমন এক জীবনসংগী কল্পনা করে,যে সুখে দু:খে পাশে থাকবে, পরস্পরকে সন্মান করবে, ভালোবাসবে? যাকে চোখ বুঁজে বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু বিয়ের পর যদি দেখা যায়, সংসারই অন্ত:সার শূণ্য ফাঁকা---হাজারো বছর পাশে থাকলে ও কেউ কারো আপন হচ্ছেন না! সন্তান সন্ততি হচ্ছে, ম্যারেজ ডে হচ্ছে, পার্টি হচ্ছে, কিন্তু কোথায় যেনো হাহাকার, মরুভূমির শূণ্যতার হা পিত্যেস!!


সে শূণ্যতার মরুদ্যানে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়েছে তৃতীয় কেউ? সংসারে নতুন একটি শব্দ যোগ হলো ভয়ংকর নেতিবাচক পরকীয়া। অদৃশ্য ব্যক্তি দৃশ্যমান হলো। তিল তিল করে দখল করে নিল কাংখিত সুপ্তমনের কামনা বাসনা। যা হবার তা হলো, সময়ের করালগ্রাসে চোরাবালিতে হারিয়ে গেলো, একটি সংসারের স্বপ্ন, সন্তানের ভবিষ্যৎ।


পরকীয়া নিয়ে আকাশ সংস্কৃতির চ্যানেলে যৌনতায় রীতিমতো অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। বাংলা, হিন্দী, তামিল, ইংরেজী এমন কোনো চ্যানেল নেই, যেখানে রমরমিয়ে যৌনতা নির্ভর অন্ত:সার শূন্য পর্ব/কাহিনী প্রচার করছে না? বাংলা মেগাসিরিয়ালে এখন পরকীয়ার জোয়ার বইছে। নতুন নতুন পরকীয়ার ক্লাস! পরকীয়ার রগরগে রমরমা কাহিনী। এখন নায়ক ১০-১২টা বিয়ে করে আবার ছেড়ে দেয়, পালিয়ে যায়, হাত কাটে, পা কাটে, বুকে নাম লেখে,পরকীয়ায় স্বামীর টাকা পয়সা হাতিয়ে কখনো গাড়িতে চেপে কখনো বিদেশ চলে যায়। শেষ হলে ফিরে আসে। কি এক কুৎসিত ভয়ংকর কাহিনী!!


পরকীয়া /বহুগামিতায় বধূদের পরিচয় শেষতক সেক্স ওয়ার্কার। চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক, পরিচালক সাহেবরা এখন পরকীয়ার মহাগুরু। এসব কদাকার ব্যক্তিকে কিছু বলতে গেলেই যতো বিপত্তি! এঁনারা বলবেন, চিন্তন, মনন, সৃষ্টিশীলতা উনাদের সাংবিধানিক নাগরিক অধিকার? এঁনাদের সমাজ বিনির্মাণ, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে, পারিবারিক দৃঢ় বন্ধনে মনন, সৃজনী, মেধা কাজ করে না।


মাঝে মাঝে বাউল তত্ত্বের সহজিয়া মতবাদে গূঢ় রহস্য না বোঝে নারী পুরুষের অবাধ যৌনতাকে স্বীকৃতি দেয়। সোশ্যাল নেটওয়াকিংয়ের জগতে পরকীয়া /বহুগামিতার জন্যে অ্যাশলে ম্যাডিসন নামের ওয়েবসাইট রয়েছে। যাদের শ্লোগান হলো-লাইফ ইজ শর্ট, হ্যাভ অ্যান অ্যাফেয়ার। সমাজে যতোক্ষন পুরুষদের কাছে ব্যাভিচার,পরকীয়া, বহুগামিতায় লজ্জা আসবে না,পরিবারের প্রতি শতভাগ প্রমিস কমিটমেন্ট আসবে না, ততোক্ষণ নারীদের কমিটমেন্ট প্রত্যাশা স্ব-বিরোধীতা নয় কি?


একবিংশ শতাব্দীর নারীরা একেবারে পড়াশোনা না জানলেও তারা গুগুল, ফেসবুক, ইমো চালাতে জানেন। তাকে আমি, আপনি,আপনারা ছলে, বলে, কৌশলে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছি, ভয়ংকর আলো-আঁধারি স্থানে। সে নারী কারো কন্যা, মাতা, বোন আত্নীয়। তাকে নিয়েই সংসার করবে আপনার মতো সমাজের কেউ। তার তিলে তিলে জমানো সঞ্চিত আস্থা, বিশ্বাস আপনি ভেঙে দিয়েই আপনি পার পেয়ে যাবেন? না সময়ের পরিক্রমায় সে চোরাবালিতে আপনি অবশ্যই ডুবে যাবেন।


তাই প্রতারিত বিরহকাতর প্রেমিক হিসেবে কথা সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়েছি। দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়। বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীলপদ্ম। তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ। এখনো সে যে কোনো নারী।’


আসলে সমাজ বিনির্মাণ করতে পরকীয়ার ভয়াবহ বিস্তার ঠেকাতে পুরুষের পক্ষে একা সম্ভব নয়। জাতীয় কবি বলেছেন, ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যানকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,অর্ধেক তার নর।’


পরম মমতা, বিশ্বাস, সততায় পুরুষ, নারীদের নিয়ে গড়তে হবে একটি শ্লোগান, একটি প্রত্যয়। তাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধ, সাম্য, পারিবারিক সততায় মার্জিত করলেই সমাজে পরকীয়া/বহুগামিতার বিরুদ্ধে অবশ্যই সুফল বয়ে আনবে।


লেখক- রাজীব কুমার দাশ, পুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ।

আরো দেখুন

আরও সংবাদ